রোহিঙ্গারা গ্যাস ফ্রি পেলেও স্থানীয়দের জন্য দাম বাড়ছে

মাহাবুবুর রহমান :
গ্যাস রোহিঙ্গাদের জন্য ফ্রি হলেও স্থানীয়দের জন্য দাম বাড়ছে দিন দিন। গত কয়েকমাস ধরে লাগামহীনভাবে বাড়ছে এলপি গ্যাস সহ সব ধরনের গ্যাসের দাম। এতে দ্রব্যমূল্যের সাথে সঙ্গতি রেখে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ।

এদিকে গ্যাস শেষ না হওয়ার আগেই রোহিঙ্গাদের বাড়িতে পৌছে দেওয়ার চেয়ে গ্যাসের দাম কমাতে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দারা।

কক্সবাজার শহরের টেকপাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী বলেন, গত মাসে গ্যাস কিনেছিলাম ১০৫০ টাকায় গতকাল সেই গ্যাস কিনেছি ১১২০ টাকায়। গ্যাসের দাম বাড়ার কারন জানতে চাইলে দোকানদার বলেন বাজারে এখন সব কিছুর দাম বাড়তি তাই গ্যাসের দামও বাড়ছে, করার কিছু নেই।

পেশকার পাড়া এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ি আব্বাস মিয়া বলেন, আমাদের সীমিত আয় তাই প্রত্যেক কিছু হিসাব করে খরচ করতে হয়। বাজারে এখন মাছ সহ তরিতরকারী থেকে শুরু করে সব কিছুর দাম বাড়তি তার উপর পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গ্যাসের দাম। মূলত এখন গ্যাস ছাড়া বাড়িতে রান্না করা কঠিন। আগে কাঠ বা অন্য কিছু থাকলেও বর্তমানে সেসব কিছু নেই। তাই একমাত্র ভরসা গ্যাস। ৩ মাস আগেও গ্যাসের দাম ছিল ৮৫০ টাকা এখন সেই গ্যাস কিনতে হচ্ছে ১১০০ টাকার বেশি দিয়ে। এখন কথা হচ্ছে আমাদের আয়তো বাড়েনি এভাবে খরচ বাড়লে আমরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়িরা কোথায় যাব।

এদিকে কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গা পরিবারের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার। আর এ সব পরিবারের মধ্যে গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে বিনামূল্যে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। একই সাথে স্থানীয়দের মাঝেও গ্যাস বিতরণ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন,রোহিঙ্গাদের মাঝে গ্যাস সহ প্রয়োজনীয় সব কিছু দেওয়া হচ্ছে এর বাইরে তাদের অনেক ধরনের বাড়তি আয় করার সুযোগ আছে। তবে সব দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয় মানুষ। বর্তমানে চাল,ডাল সহ গ্যাসের দাম বাড়তি কোন দিকে সামাল দিবে স্থানীয়রা। আর রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানও দেখছিনা সহজে। জানিনা আমাদের কপালে আর কত দুঃখ আছে।

এদিকে উখিয়া কলেজের সিনিয়র শিক্ষক অজিত দাশ বলেন, গ্যাস রোহিঙ্গাদের ফ্রি দেওয়া হচ্ছে আর বাজার থেকে বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে স্থানীয়দের বিষয়টি দুঃখজনক। আমাদের দাবী রোহিঙ্গাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয়দের যে গ্যাস সরবরাহ করা হয় সেটা নামে মাত্র দামে দেয়া হোক, এর চেয়ে ভাল হয় কক্সবাজারে গ্যাসের ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ করে দিলে। আমি এখানে একটি কথা পরিষ্কার ভাবে বলতে চায় সরকারি ভাবে গ্যাসের দাম ৬৫০ টাকার নীচে আর সেটা আমাদের কাছ থেকে নেওয়া হয় ১১০০ টাকা আর যদি এই দোকান থেকে কোন সরকারি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার বাড়িতে গ্যাস নেওয়া হয় তাহলে তার কাছ থেকে ৬৫০ টাকা নেওয়া হয়। আমার মতে  কক্সবাজার জেলাতে সরকারি মূল্যে গ্যাস দেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত।

একই মত পোষন করে সুজন সভাপতি প্রফেসর এম এ বারী বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে শুধু উখিয়া টেকনাফ ক্ষতিগ্রস্ত সেটা নয় পুরো কক্সবাজারের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত।

তাই অন্য কিছু না হউক সরকারি ন্যায্য মূল্যে কক্সবাজারের প্রতিটি উপজেলার প্রতিটি দোকানে গ্যাস বিক্রি করার ব্যবস্থা করতে পারলে সাধারণ মানুষের উপকার হবে।